তমলুক: এবছর রসায়নে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পেলেন বোম্বে আই আই টি অধ্যাপক ও গবেষক দেবব্রত মাইতি। পেশাগত কারণে মুম্বাইয়ের থাকলেও দেবব্রতের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কার দেওয়া হয়। জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পরিবেশ বিজ্ঞান, প্রকৌশলে উল্লেখযোগ্য এবং অসামান্য গবেষণা, প্রয়োগ বা মৌলিক গবেষণার জন্য কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (CSIR ) দ্বারা প্রতি বছর অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর বয়সী গবেষকদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। শুধুমাত্র পুরস্কার পাওয়ার আগের ৫ বছর ভারতে থেকেই গবেষণার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার বিজ্ঞানে মৌলিক গবেষণা ও অবদানের জন্য দেশজুড়ে বেশ কিছু গবেষককে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের চারজন এই পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন তমলুকের দেবব্রত মাইতি। ছোটবেলায় থেকে মেধাবী দেবব্রত, তমলুক ব্লকের গ্রামের স্কুল শ্রীরামপুর এগ্রিকালচার হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে রসায়নে স্নাতক করেন। বোম্বে আইআইটি থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর, আমেরিকার জন হপকিংস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। দেশে ফিরে বোম্বে আই টি আই টি -তেই তিনি অধ্যাপনা কাজের সঙ্গে যুক্ত।
বোম্বে আই টি আই টি -তেই তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর গবেষণার বিষয় কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণু পরস্পর রাসায়নিক বন্ধনে যুক্ত হয়ে গড়ে তুলে জৈবিক অনুর প্রাথমিক গঠন। এই জৈব অনুর নির্দিষ্ট অবস্থানে উপস্থিত কার্বন ও হাইড্রোজেন বন্ধনের বিভাজন ঘটিয়ে কার্বন পরমাণুর সঙ্গে অন্য পরমাণু বা অনু জুড়ে দেওয়া। কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর পরস্পর রাসায়নিক বন্ধনে যুক্ত হয়ে গড়ে তোলে জৈবিক অনু। জৈব অনুর নির্দিষ্ট অবস্থানে উপস্থিত কার্বনো হাইড্রোজেন বন্ধনের বিভাজন ঘটিয়ে কার্বন পরমাণুর সঙ্গে অন্য অনু বা পরমাণু জুড়ে দিতে পারলেই সহজে প্রস্তুত হবে জীবন দেয় এই ঔষধ এগ্রিকেমিক্যাল ও দৈনন্দিন সামগ্রী।
বিপাকক্রিয়ায় চলাকালীন জীবদেহে উপস্থিত উৎসেচক অতি সহজেই ভেঙে ফেলতে পারে কার্বোহাইড্রোজেন এর বন্ধন। উৎসেচকের এই কার্যপ্রণালীকে যদি গবেষণাগারে অনুকরণ করা সম্ভব হয় তাহলে সুলভে ও সুগমে প্রস্তুত করা যাবে জীবন দায়ী ঔষধ কীটনাশক আরো নানাবিধ সামগ্রী এবং রাসায়নিক দ্রব্য। এই ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন দেবব্রত, সন্ধিগত মৌলের অনুঘটন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শেষমেষ আসে সাফল্য। আর এই আবিষ্কারকে কুর্নিশ জানাতে এ বছর শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী দেবব্রত প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেধার জোরে বর্তমানে নিজেকে এই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু তারপরও তিনি ভুলেননি তার শেকড় কে। তাই সময় পেলেই গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। এমনকি গ্রামের পুরনো বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডাও দেন। অধ্যাপনা ও গবেষণার পাশাপাশি দেবব্রত ভালোবাসেন গান শুনতে। দেবব্রতের এই সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার, প্রাক্তন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকার পাশাপাশি গ্রামের মানুষজন।